মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয় সমীপে মুক্তির খোলা চিঠিঃ

মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয় সমীপে মুক্তির খোলা চিঠিঃ

মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয় সমীপে মুক্তির খোলা চিঠিঃ

মহোদয়,

যথাযোগ্য মর্যাদা ও সন্মান পুরঃসর বিনীত নিবেদন এই যে, আমি জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি জাতীয় কন্ঠশিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। ইউনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নূর আলীর ব্যক্তিগত সচিব থাকাকালীণ ২০০২ সালে জামাত বি এন পি জোট সরকারের অবৈধ আস্তানা "হাওয়া ভবনের" ভূয়া মামলা ও নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হই এবং মালদ্বীপে এসে একটি স্কুলে শিক্ষকতা শূরু করি।

আমার চির স্বভাবজনিত দুর্বিনীত প্রতিবাদী মানসিকতার কথা স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান সরকারের বহু নেতা/মন্ত্রীগণ অবহিত রয়েছেন। আওয়ামী লীগ অফিসে বঙ্গবন্ধুর গানের মুক্তি নামেই সর্বজনবিদিত।

আওয়ামী রক্ত তাই প্রবাসে এসেও নীরব থাকতে পারিনি; যে দেশে প্রবাসীদের রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ সে দেশে আমি মুক্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম মালদ্বীপ আওয়ামী লীগ।

মালদ্বীপস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ( সাবেক হাই কমিশন) এর সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী হিসেবে বহু লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে।

Image may contain: 1 personএমন কি এতদবিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জেনারেল আবেদীন, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল ফারুক, আব্দুস সোবহান গোলাপ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমান, জুনায়েদ আহমেদ পলক ও ডঃ দীপুমনিও অবহিত আছেন।

মালদ্বীপ আওয়ামী লীগের অনেক অনুষ্ঠানেই বহু মন্ত্রী ও মান্যবর সাবেক হাই কমিশনার রিয়ার এডমিরাল আওয়াল সাহেবও যোগদান করেছিলেন । ভিডিও ও ছবি প্রমানবহন করে (ছবি সংযুক্ত )


মালদ্বীপ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২০১৪ সালে ইস্কান্দার স্কুলে জাতীয় শোক দিবস পালনের আয়োজন করেছিলাম । সে অনুষ্ঠান করতে দেয়নি হেড অফ দি চ্যাঞ্চেরী হারুন অর রশিদ।


আমি মালদ্বীপের মহামান্য প্রেসিডেন্ট ডঃ ইয়ামীন মাওমুনের একটি অনুষ্ঠানে তাঁর সামনেই ছিলাম।


হঠাত একটি ফোন এলোঃ

*******************

ঃহ্যালো আমি হেড অফ দি চ্যাঞ্ছেরী হারুন অর রশিদ বলছি;

ঃকে মুক্তি সাহেব বলছেন?

ঃজ্বি

ঃশুনেছি আপনি ১৫ই আগষ্ট পালন করছেন আপনার ইস্কান্দার স্কুলে?

ঃজ্বি আমার সব অনুষ্ঠান তো ইস্কান্দার স্কুলেই হয়ে থাকে।

ঃআপনি এ অনুষ্ঠান করতে পারবেন না; ঐ দিন হাই কমিশন থেকে অনুষ্ঠান করা হবে সূতরাং আপনার অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হবে;

ঃআমি এ মুহূর্তে কথা বলতে পারছি না; আমি প্রেসিডেন্টের সামনে কাজেই পড়ে কথা বলছি;

ঃআপনি বুঝতে পারছেন তো যে হাই কমিশন আপনাকে কল করেছে?

******************

মালদ্বীপের রাজধানী মালে ইস্কান্দার স্কুলে আমি মুক্তি যে হলটিতে পররাষ্ট্র প্রতি মন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রবাসী কল্যান ও জনশক্তিমন্ত্রী ইঞ্জিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেরকে সংবর্ধনা দিয়েছি, সে হলেই আয়োজন করেছিলাম জাতীয় শোক দিবস ২০১৪।


সে অনুষ্ঠানের অপরাধেই আমার মালদ্বীপের সোনালী দিনগুলো ১৫ই আগস্টের চেয়েও ভয়াবহ করে তুলেছিল এই হারুন অর রশিদ, হেড অফ দি চ্যাঞ্ছেরী এবং সাবেক হাই কমিশনার রিয়ার এডমিরাল আওয়াল।

********

মালদ্বীপে আমার হাতে গড়া আওয়ামী লীগের ছেলেদের ভয় ভীতি দেখিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিয়ে আমাকে পঙ্গু করে দেয়া হল। তারপরেও হারুন অর রশিদ সাহেবের খায়েশ মিটেনি। সে মালে অবস্থানরত তার পোষা দালাল আদম ব্যবসায়ী, গাঞ্জা ব্যবসায়ী, ডলার ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপ নিয়ে চলে এবং সীমাহীন দুর্নীতি লুটপাট করে বেড়ায়। এখানে অতিরঞ্জিত কিছুই লিখছি না। প্রমান সহই দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণ করেছি আমি তদন্ত চাই। অতি সম্প্রতি সে ঐ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে। আমাকে টেলিফোনে মারধর করার হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি মালদ্বীপ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।


মালদ্বীপ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হয়ে গেল। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে বাংলাদেশ দূতাবাস গত ২১শে ফেব্রুয়ারি এবং স্বাধীনতা দিবসে একজন ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় কন্ঠশিল্পী ও মালদ্বীপ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মালদ্বীপ সরকারের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিক্ষক (আমি নিজে ), একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মালদ্বীপে কর্মরত ৩৩ বছরের সিনিয়র ফিজিক্সের শিক্ষক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মীর সাইফুল ইসলাম এবং আর একজন ২৫ বছর যাবত মালদ্বীপে শিক্ষকতায়রত গজল সঙ্গীত শিল্পী মালদ্বীপের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সর্বজনবিদিত শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলাম।


এই তিন জন শিক্ষকের কাউকেই মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মালদ্বীপস্থ দূতাবাস নিমন্ত্রণ করেন নি। বিষয়টি মালদ্বীপের মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেন্ট হাউসের কর্মকর্তাদেরও নজরে এসেছে। এ দেশে বাংলাদেশী এই তিনজন শিক্ষকই অত্যন্ত দক্ষতার কারনে এবং বিশেষ করে শফিক ও আমি গানের কারনে প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে কোন মন্ত্রী, ধনিক ব্যবসায়ী, বর্ণাঢ্য বণিক শিল্পী ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কেউ নেই যে আমাদের এই তিনজনকে না চিনেন বা না জানেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে স্বাধীনতা দিবসে আমন্ত্রণ না করার হেতু একটাই হতে পারে যে দেশ আজো স্বাধীন হয়নি অথবা এই দূতাবাস পাকিস্তানের অথবা এই দূতাবাসে মহান স্বাধীনতার স্বপক্ষের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী নেই।


মহান স্বাধীনতা দিবসে কেন আমাদের দূতাবাস নিমন্ত্রণ করেনি? আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভাগীয় মাননীয় মন্ত্রী হিসেবে আপনাকে অবহিত করলাম।

আমরা জাতীয় সম্পদ। আমাদেরকে জাতীয়ভাবেই অপমান করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। কারন জানতে চাই।


মহানুভব, পররাষ্ট্রনীতি ও কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাত আপনার সমগ্র জীবনের লব্ধ অভিজ্ঞতা আজ পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রশাসনিক জটিলতা সমস্যাদি সমাধান ও বিদেশের সাথে পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপনে আপনার সততা শ্রম ও সফলতার সূত্র ধরেই আজ সুবিচারের প্রত্যাশায় আপনাকে অবহিত করলাম। যদি বাংলাদেশ সরকার মনে করে আমি বাঙ্গালী নই, বাংলাদেশী নই-আমার পাসপোর্ট বাংলাদেশ সরকার জব্ধ করতে পারে, আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্ত এ অপমানের বোঝা নিয়ে বাঙ্গালী হিসেবে আর মালদ্বীপে পরিচয় দিতে চাইনা। প্রয়োজনে পাসপোর্ট পুড়িয়ে শরণার্থী হয়ে যাবো যেমনটি হয়েছিলাম ১৯৭১ সালে ভারতে আশ্রয় নিয়ে।

ভালো থাকুক দেশের মানুষ ভালো থাকুক শেখ মুজিবের নিরস্পেষিত নির্যাতিত লাঞ্ছিত বঞ্চিত অবহেলিত চির দুখি চির সংগ্রামী বাঙ্গালী জাতি।

আল্লাহ আপনার ভালো করুন;

দেশ আরো এগিয়ে যাক, আরো উন্নয়ন ঘটূক, উত্তরোত্তর বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ খ্যাত স্বীকৃতিকে ডিঙ্গিয়ে উন্নত দেশের তালিকায় লিপিবদ্ধ হোক;


জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু

আপনার একান্ত ভক্ত অনুরাগী

মোকতেল হোসেন মুক্তি

বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় কন্ঠশিল্পী

সিনিয়র সঙ্গীত শিক্ষক

ইস্কান্দার স্কুল মালে, মালদ্বীপ

Thursday, July 28, 2011

‘যুদ্ধাপরাধের বিচার আমরাও চাই: খালেদা জিয়া

কয়েক দিন আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আলাপ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার আমরাও চাই। কিন্তু বিচারের নামে রাজনৈতিকভাবে কাউকে হয়রানি করা যাবে না।১৯ মে পল্টন ময়দানে আয়োজিত সমাবেশে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘বিএনপি যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধী নয়। তবে সেই বিচারের নামে কাউকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা হলে তাঁরা মেনে নেবেন না।খুবই ন্যায়সংগত ও যুক্তিপূর্ণ কথা। ন্যায়বিচারের স্বার্থেই সব বিচার-প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের মতো স্পর্শকাতর একটি বিচার-প্রক্রিয়ায় কোনো গলদ বা ফাঁকফোকর থাকা উচিত নয়। এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যখন যুদ্ধাপরাধের বিচারে বিএনপির সহযোগিতা চাইলেন, তখন দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বললেন, একদিকে সহযোগিতা চাইবেন, অন্যদিকে দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালাবেন, এ স্ববিরোধী নীতি চলতে পারে না। কেবল তিন শীর্ষস্থানীয় নেতা নন, চিহ্নিত কয়েকজন বাদে গত ১৯ মাসে বিএনপির প্রায় সব স্তরের নেতা-নেত্রীর বক্তৃতা-বিবৃতি ঘাঁটলে দেখা যাবে, সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও কেউ যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নেননি।কিন্তু ৫ অক্টোবর জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে খালেদা জিয়া তাঁর বক্তৃতায় সরাসরি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পরপরই প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। স্বাধীনতাবিরোধীদেরও তখনকার সরকার ক্ষমা করে দিয়েছিল। আজ প্রায় চার দশক পর স্বাধীনতাবিরোধীদের সহযোগীদের বিচারের কথা বলে জাতিকে হানাহানির দিকে ঠেলে দেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। সরকারের দুমুখো নীতির বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক জনগণকে রুখে দাঁড়াতে হবে (প্রথম আলো, ৬ অক্টোবর ২০১০)।আমরা ধন্দে পড়ে যাই। এ কার কণ্ঠ শুনছিমুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বিএনপি-প্রধানের কণ্ঠ, না স্বাধীনতাবিরোধী ও মৌলবাদী কোনো দলনেত্রীর?বক্তব্যটি হঠা মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে, তা ভাবার কারণ নেই। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে এ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে, সংক্ষেপে তার বিবরণও দিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর কথায়, জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রতিধ্বনি ছিল না, ছিল জামায়াতের সুর। 
খালেদা জিয়ার প্রথম কথা হলো, আওয়ামী লীগ প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদেরবিচার করেনি। স্বাধীনতাবিরোধীদের সহযোগীদের বিচারের নামে এখন তারা জাতিকে হানাহানির দিকে ঠেলে দিতে চাইছে। গুটিকয়েক যুদ্ধাপরাধীর বিচার করলে দেশে হানাহানি দেখা দেবে না। বরং তাদের বিচার না হওয়ায় জাতিকে কলঙ্কের বোঝা বইতে হচ্ছে।তাঁর দ্বিতীয় কথা হলো, এই বিচার রুখে দিতে হবে।কী মারাত্মক কথা! বিচার সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হওয়ার কথা নয়। বিচার রুখে দিতে হবে!বিএনপি নিজেকে মধ্যপন্থী, উদার গণতান্ত্রিক ও সাচ্চা জাতীয়তাবাদী দল বলে দাবি করে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বও নাকি বিএনপি ছাড়া অন্য কারও হাতে নিরাপদ নয়। স্বাধীনতার সঙ্গে জাতীয় চেতনা, মুক্তিযুদ্ধ, জনমানুষের আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি নিশ্চয়ই ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
বিএনপি নেত্রী কোথায় পেলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার করলে জাতি বিভক্ত হবে? হানাহানি সৃষ্টি হবে? কোন দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করায় জাতি বিভক্ত হয়েছে? গণহত্যা ও বর্বরতার দায়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত নাসি বাহিনীর বিচার হয়েছে। বসনিয়া ও কাম্পুচিয়ার যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার চলছে। তাতে সেসব দেশ বিভক্ত বা দুর্বল হয়নি। গ্লানি ও পাপমুক্ত হয়েছে।খালেদা জিয়া প্রায় চার দশক পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রশ্নটি যৌক্তিক, কিন্তু উদ্দেশ্য স নয়। আমরাও মনে করি, মানবতা ও সভ্যতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনকারীদের বিচার অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। এত দিনেও তাদের বিচার করতে না পারা আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা। যুক্তির খাতিরে ধরে নিলাম, স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বিচার না করে ভুল করেছে। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে সেই ভুল সংশোধন করল না কেন? স্বাধীন বাংলাদেশে বিএনপিই তো সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল। নিশ্চয়ই আবারও তারা ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখে।আমরা অতীত নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করতে চাই না। আইন ও ন্যায়বিচারের কথা বলতে চাই। বিএনপি নেত্রীকে জিজ্ঞেস করতে চাই, স্বাধীনতার চার দশক পর যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নিতে আইনগত বাধা আছে কি? নেই। তাহলে বিএনপির গা জ্বালা করার কারণটা কী? তাদের দলে কতজন যুদ্ধাপরাধী আছে? মাত্র একজনের (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) অপরাধ তদন্ত করায় খালেদা জিয়া এভাবে খেপে গেলেন কেন? না এর পেছনে আরও কারণ আছে? ৮ অক্টোবরের কাগজে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাবেক শিল্পসচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা শোয়েব আহমদ আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, ‘কালীন শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী তাঁকে বলেছিলেন, এ বিষয়ে দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ অবগত আছে। সরকার সব ব্যবস্থা নিচ্ছে।’ (প্রথম আলো, ৮ অক্টোবর, ২০১০)।যুদ্ধাপরাধের বিচারে খালেদা জিয়া বা বিএনপির অবস্থান পরিবর্তনের সঙ্গে ১০ ট্রাক অস্ত্রের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, সেটিও ভেবে দেখার বিষয়। সে দিন মতিউর রহমান নিজামী শিল্পসচিবকে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের কথা বলে অভয় দিয়েছিলেন। তার বিনিময়ে আজ কি খালেদা জিয়া নিজামী সাহেবদের এই বলে অভয় দিচ্ছেন যে আমরা আছি তোমার পাশে’?খালেদা জিয়া প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করে সহযোগীদের বিচার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে প্রকৃতঅপ্রকৃতবলে কিছু নেই। যারা একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের মতো ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত ছিল, তারাই যুদ্ধাপরাধী। খালেদা জিয়া প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীবলতে নিশ্চয়ই দখলদার পাকিস্তানি সেনাদের বুঝিয়েছেন। আমরা তাদের বিচার করতে পারিনি, সেটি আমাদের ব্যর্থতা। তাই বলে দেশীয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা যাবে না কেন? খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের স্বাধীনতাবিরোধীদের সহযোগীবলে তাদের অপরাধ লাঘব করতে চাইছেন। সরকার এখন স্বাধীনতাবিরোধীরবিচার করছে না, তাদের জন্য বিশেষ আদালতও গঠন করা হয়নি। বিচার হচ্ছে একাত্তরে হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধে যারা জড়িত ছিল, তাদের। সে সময় জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী, পিডিপি, কৃষক প্রজা পার্টি এবং অন্যান্য দলের হাজার হাজার নেতা ও কর্মী স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর দালাল আইনে তাঁদের বিচার শুরু হয়েছিল। অনেকের জেল-জরিমানা হয়েছিল। অনেকে আবার ক্ষমতাসীনদের নানা রকম এনাম দিয়ে ছাড়াও পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমা করে দিয়েছিল, এ কথা ঠিক। সেই ক্ষমার মধ্যে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে কেন ক্ষমাপ্রাপ্তদের রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করল? দেশের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী বানাল? আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমা করে যদি সগিরা গুনাহ করে থাকে, বিএনপি করেছে কবিরাহ গুনাহ।

এরপর খালেদা জিয়া যে ভয়ংকর কথাটি বলেছেন, তা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার রুখে দিতে হবেতিনি কীভাবে ভাবলেন, জনগণ তাঁর এই আহ্বানে সাড়া দেবে?২০০৮ সালের নির্বাচনের কথা কি তাঁর মনে আছে? সেই নির্বাচনে তিনি দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও স্লোগান দিয়েছিলেন। ভোটাররা আমলে নেননি। বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধের বিচারের কথা ছিল না। আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ছিল। জনগণ আওয়ামী লীগকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। এখন আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করলে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের দায়ে তাদের অভিযুক্ত হতে হবে। যেমনটি হয়েছিল ১৯৯৬ সালে।এ কথা ঠিক, গত ২০ মাসে আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কাছে দেওয়া অনেক অঙ্গীকারই রাখতে পারেনি। সর্বত্র দলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নিয়োগবাজি চলছে। বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির উচিত এর প্রতিবাদ করা। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করছে কেন? আগে বিদেশি জুজুর ভয় দেখাত। কিন্তু যখন দেখা গেল কোনো দেশই তাদের কথা আমলে নিচ্ছে না তখন হানাহানির ভয় দেখাচ্ছে। এটি দায়িত্বশীল বিরোধী দলের কাজ নয়।বিএনপি চেয়ারপারসন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার রুখে দাঁড়ানোর জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দেশবাসী দূরে থাক, এ কাজে তিনি দলের কর্মীদেরও পাবেন নাবিএনপিতে হাতে গোনা কয়েকজন যুদ্ধাপরাধী থাকলেও সবাই তাদের সমর্থক নয়। দলের নতুন প্রজন্মের নেতা-কর্মীরাও যুদ্ধাপরাধের বিচার চান। আমরা স্মরণ করতে পারি, ১৯৯২ সালে গোলাম আযমের নাগরিকত্বকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ঘাতক-দালালবিরোধী আন্দোলনের শুরুতে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময় শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁদের খামোশ করে দিয়েছিলেন। এখনো কি জামায়াতকে রক্ষা করতে খালেদা জিয়া দলীয় কর্মীদের খামোশ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন?যে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান একজন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন, যে দলে এখনো বহু মুক্তিযোদ্ধা আছেন, সেই দলটি যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধিতা কীভাবে করে? তাহলে জামায়াত ও বিএনপির মধ্যে তো কোনো পার্থক্য থাকে না।খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত অন্যান্য পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করলেও রুখে দিতে বলেননি, কিন্তু যুদ্ধাপরাধের বিচার রুখে দিতে বলেছেন। কেন রুখে দিতে হবে? তাতে জামায়াতের নেতারা, অর্থা তাঁর দলের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরা খুশি হবেন বলে? এ আহ্বানের একটাই উদ্দেশ্য, তা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর মিশনে নেমেছেন তিন-তিনবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বপালনকারী খালেদা জিয়া। কেন তাদের বাঁচাতে হবে? মনে রাখবেন, জামায়াতের মিত্রতা রক্ষার বিনিময় মূল্য অনেক বেশি। বিএনপি হঠা কেন যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নিল? কার স্বার্থে? তাহলে আওয়ামী লীগের নেতারা যে অভিযোগ করে আসছিলেন সেটাই ঠিকবিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চাইছে।খালেদা জিয়া আরও বলেছেন, ‘ঐক্যবদ্ধ একটি সুন্দর দেশ ও সমাজ গড়ার জন্য জনগণ মুক্তিযুদ্ধ করেছে। আজ সেই মুক্তিযুদ্ধকে জাতির বিভাজনের হাতিয়ার করার অপচেষ্টা চলছে। ইতিহাসের বিকৃতিকে আমরা মেনে নিতে পারি না।’ 
ইতিহাসের বিকৃতি কারও কাম্য নয়। ইতিহাস নির্মাণে যাঁদের কোন ভূমিকা নেই, তাঁরাই ইতিহাস বিকৃতি করেন। এর দায় থেকে কেউ মুক্ত নন। ক্ষমতার হাত বদলের সঙ্গে সঙ্গে নাম কর্তন হয়, নাম যুক্ত হওয়ার মহড়া চলে। হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ১৫ খণ্ডের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রকে মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জিয়াউর রহমানের উদ্যোগেই এ দলিলপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। চারদলীয় জোট আমলে তৃতীয় খণ্ড থেকে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটিই গায়েব করে দেওয়া হয়েছিল কার নির্দেশে? এর উদ্দেশ্য পরিষ্কার। জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বানানো। ২৭ মার্চ তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে জন্য বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি গায়েব করতে হবে কেন? ইতিহাসে যাঁর যেটুকু স্থান তা দিতে হবে। একাত্তরে জাতি ঐক্যবদ্ধ ছিল। কতিপয় রাজাকার-আলবদর ও শান্তি কমিটির সদস্য বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ঠেকাতে পারেনি। খালেদা জিয়া কিংবা তাঁর দল বিএনপিও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে পারবে না। যদি গায়ের জোরে বিচার ঠেকাতে চায়, তাহলে জনগণই তাদের ঠেকিয়ে দেবে।

No comments:

Post a Comment