মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয় সমীপে মুক্তির খোলা চিঠিঃ

মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয় সমীপে মুক্তির খোলা চিঠিঃ

মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মহোদয় সমীপে মুক্তির খোলা চিঠিঃ

মহোদয়,

যথাযোগ্য মর্যাদা ও সন্মান পুরঃসর বিনীত নিবেদন এই যে, আমি জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি জাতীয় কন্ঠশিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। ইউনিক গ্রুপের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নূর আলীর ব্যক্তিগত সচিব থাকাকালীণ ২০০২ সালে জামাত বি এন পি জোট সরকারের অবৈধ আস্তানা "হাওয়া ভবনের" ভূয়া মামলা ও নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হই এবং মালদ্বীপে এসে একটি স্কুলে শিক্ষকতা শূরু করি।

আমার চির স্বভাবজনিত দুর্বিনীত প্রতিবাদী মানসিকতার কথা স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমান সরকারের বহু নেতা/মন্ত্রীগণ অবহিত রয়েছেন। আওয়ামী লীগ অফিসে বঙ্গবন্ধুর গানের মুক্তি নামেই সর্বজনবিদিত।

আওয়ামী রক্ত তাই প্রবাসে এসেও নীরব থাকতে পারিনি; যে দেশে প্রবাসীদের রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ সে দেশে আমি মুক্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম মালদ্বীপ আওয়ামী লীগ।

মালদ্বীপস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ( সাবেক হাই কমিশন) এর সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী হিসেবে বহু লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে।

Image may contain: 1 personএমন কি এতদবিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জেনারেল আবেদীন, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল ফারুক, আব্দুস সোবহান গোলাপ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমান, জুনায়েদ আহমেদ পলক ও ডঃ দীপুমনিও অবহিত আছেন।

মালদ্বীপ আওয়ামী লীগের অনেক অনুষ্ঠানেই বহু মন্ত্রী ও মান্যবর সাবেক হাই কমিশনার রিয়ার এডমিরাল আওয়াল সাহেবও যোগদান করেছিলেন । ভিডিও ও ছবি প্রমানবহন করে (ছবি সংযুক্ত )


মালদ্বীপ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২০১৪ সালে ইস্কান্দার স্কুলে জাতীয় শোক দিবস পালনের আয়োজন করেছিলাম । সে অনুষ্ঠান করতে দেয়নি হেড অফ দি চ্যাঞ্চেরী হারুন অর রশিদ।


আমি মালদ্বীপের মহামান্য প্রেসিডেন্ট ডঃ ইয়ামীন মাওমুনের একটি অনুষ্ঠানে তাঁর সামনেই ছিলাম।


হঠাত একটি ফোন এলোঃ

*******************

ঃহ্যালো আমি হেড অফ দি চ্যাঞ্ছেরী হারুন অর রশিদ বলছি;

ঃকে মুক্তি সাহেব বলছেন?

ঃজ্বি

ঃশুনেছি আপনি ১৫ই আগষ্ট পালন করছেন আপনার ইস্কান্দার স্কুলে?

ঃজ্বি আমার সব অনুষ্ঠান তো ইস্কান্দার স্কুলেই হয়ে থাকে।

ঃআপনি এ অনুষ্ঠান করতে পারবেন না; ঐ দিন হাই কমিশন থেকে অনুষ্ঠান করা হবে সূতরাং আপনার অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হবে;

ঃআমি এ মুহূর্তে কথা বলতে পারছি না; আমি প্রেসিডেন্টের সামনে কাজেই পড়ে কথা বলছি;

ঃআপনি বুঝতে পারছেন তো যে হাই কমিশন আপনাকে কল করেছে?

******************

মালদ্বীপের রাজধানী মালে ইস্কান্দার স্কুলে আমি মুক্তি যে হলটিতে পররাষ্ট্র প্রতি মন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রবাসী কল্যান ও জনশক্তিমন্ত্রী ইঞ্জিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন দেরকে সংবর্ধনা দিয়েছি, সে হলেই আয়োজন করেছিলাম জাতীয় শোক দিবস ২০১৪।


সে অনুষ্ঠানের অপরাধেই আমার মালদ্বীপের সোনালী দিনগুলো ১৫ই আগস্টের চেয়েও ভয়াবহ করে তুলেছিল এই হারুন অর রশিদ, হেড অফ দি চ্যাঞ্ছেরী এবং সাবেক হাই কমিশনার রিয়ার এডমিরাল আওয়াল।

********

মালদ্বীপে আমার হাতে গড়া আওয়ামী লীগের ছেলেদের ভয় ভীতি দেখিয়ে দেশে পাঠিয়ে দিয়ে আমাকে পঙ্গু করে দেয়া হল। তারপরেও হারুন অর রশিদ সাহেবের খায়েশ মিটেনি। সে মালে অবস্থানরত তার পোষা দালাল আদম ব্যবসায়ী, গাঞ্জা ব্যবসায়ী, ডলার ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপ নিয়ে চলে এবং সীমাহীন দুর্নীতি লুটপাট করে বেড়ায়। এখানে অতিরঞ্জিত কিছুই লিখছি না। প্রমান সহই দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রেরণ করেছি আমি তদন্ত চাই। অতি সম্প্রতি সে ঐ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে। আমাকে টেলিফোনে মারধর করার হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি মালদ্বীপ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।


মালদ্বীপ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন হয়ে গেল। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে বাংলাদেশ দূতাবাস গত ২১শে ফেব্রুয়ারি এবং স্বাধীনতা দিবসে একজন ভারতে প্রশিক্ষণ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা, জাতীয় কন্ঠশিল্পী ও মালদ্বীপ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মালদ্বীপ সরকারের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিক্ষক (আমি নিজে ), একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মালদ্বীপে কর্মরত ৩৩ বছরের সিনিয়র ফিজিক্সের শিক্ষক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মীর সাইফুল ইসলাম এবং আর একজন ২৫ বছর যাবত মালদ্বীপে শিক্ষকতায়রত গজল সঙ্গীত শিল্পী মালদ্বীপের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সর্বজনবিদিত শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলাম।


এই তিন জন শিক্ষকের কাউকেই মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মালদ্বীপস্থ দূতাবাস নিমন্ত্রণ করেন নি। বিষয়টি মালদ্বীপের মন্ত্রণালয় ও প্রেসিডেন্ট হাউসের কর্মকর্তাদেরও নজরে এসেছে। এ দেশে বাংলাদেশী এই তিনজন শিক্ষকই অত্যন্ত দক্ষতার কারনে এবং বিশেষ করে শফিক ও আমি গানের কারনে প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে কোন মন্ত্রী, ধনিক ব্যবসায়ী, বর্ণাঢ্য বণিক শিল্পী ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কেউ নেই যে আমাদের এই তিনজনকে না চিনেন বা না জানেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে স্বাধীনতা দিবসে আমন্ত্রণ না করার হেতু একটাই হতে পারে যে দেশ আজো স্বাধীন হয়নি অথবা এই দূতাবাস পাকিস্তানের অথবা এই দূতাবাসে মহান স্বাধীনতার স্বপক্ষের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী নেই।


মহান স্বাধীনতা দিবসে কেন আমাদের দূতাবাস নিমন্ত্রণ করেনি? আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভাগীয় মাননীয় মন্ত্রী হিসেবে আপনাকে অবহিত করলাম।

আমরা জাতীয় সম্পদ। আমাদেরকে জাতীয়ভাবেই অপমান করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই। কারন জানতে চাই।


মহানুভব, পররাষ্ট্রনীতি ও কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাত আপনার সমগ্র জীবনের লব্ধ অভিজ্ঞতা আজ পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রশাসনিক জটিলতা সমস্যাদি সমাধান ও বিদেশের সাথে পারস্পরিক সুসম্পর্ক স্থাপনে আপনার সততা শ্রম ও সফলতার সূত্র ধরেই আজ সুবিচারের প্রত্যাশায় আপনাকে অবহিত করলাম। যদি বাংলাদেশ সরকার মনে করে আমি বাঙ্গালী নই, বাংলাদেশী নই-আমার পাসপোর্ট বাংলাদেশ সরকার জব্ধ করতে পারে, আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্ত এ অপমানের বোঝা নিয়ে বাঙ্গালী হিসেবে আর মালদ্বীপে পরিচয় দিতে চাইনা। প্রয়োজনে পাসপোর্ট পুড়িয়ে শরণার্থী হয়ে যাবো যেমনটি হয়েছিলাম ১৯৭১ সালে ভারতে আশ্রয় নিয়ে।

ভালো থাকুক দেশের মানুষ ভালো থাকুক শেখ মুজিবের নিরস্পেষিত নির্যাতিত লাঞ্ছিত বঞ্চিত অবহেলিত চির দুখি চির সংগ্রামী বাঙ্গালী জাতি।

আল্লাহ আপনার ভালো করুন;

দেশ আরো এগিয়ে যাক, আরো উন্নয়ন ঘটূক, উত্তরোত্তর বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ খ্যাত স্বীকৃতিকে ডিঙ্গিয়ে উন্নত দেশের তালিকায় লিপিবদ্ধ হোক;


জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু

আপনার একান্ত ভক্ত অনুরাগী

মোকতেল হোসেন মুক্তি

বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় কন্ঠশিল্পী

সিনিয়র সঙ্গীত শিক্ষক

ইস্কান্দার স্কুল মালে, মালদ্বীপ

Friday, August 26, 2011

Ziaur Rahman & Brutality: Shelter and promoting war criminal

১৯৩৬ সালের এই দিনে বগুড়া জেলার বাগমারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জিয়াউর রহমান -
১। যিনি সেনাবাহিনীতে চাকরিরত অবস্থায় ১৯৭১ সালে বিদ্রোহ করে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন ।
২।যিনি মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর ও ফোর্স অধিনায়ক ছিলেন যার বিরুদ্ধে মুজিবনগর সরকার/ সিইনসি ওসমানী শাস্তিমূ্লক ব্যবস্থা নেয় ।
৩।যিনি ১৯৭৫ সালে ঘাত-সংঘাতময় সময়ের এক দু্র্বোধ্য চরিত্র ছিলেন !
৪। যিনি ৭ নভেম্বর '৭৫ এ জাসদের বীরউত্তম কর্নেল তাহেরের [৩]পরিকল্পনা ও উদ্যোগে পরিচালিত কথিত সিপাহি জনতার অভ্যুত্থানে মুক্তিযুদ্ধের বীরসেনানি খালেদ-হায়দার-হুদার  লাশের উপর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অধিষ্ঠিত হন ২য় ফিল্ড রেজিমেন্টে ও ৪র্থ ইষ্ট বেঙ্গলের অফিসার ও সৈনিকদের প্রত্যক্ষ মদদে । ৫। যিনি তাহেরের সাথে প্রথম দেখায় (৭ নভেম্বর '৭৫) তাকে আলিঙ্গন করে বলেন -"ইউ আর মাই ব্রাদার , ইউ আর মাই সেভার" । আর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অধিষ্ঠিত হয়ে তাহের আর সিপাহিদের উপহার দেন ফাঁসি "Hang them by the neck till they are dead" -General Ziaur Rahman.  বীরউত্তম তাহেরের ফাঁসি তদারকি করেন বীর উত্তম মীর শওকত ।৫। বলা হয়, জিয়া তাহেরের সাথে বেঈমানি করেছেন । কথা সত্য কিন্তু জিয়া কার সাথে বেঈমানি করেননি ? বিধায়, জিয়ার পাওয়ারে আসার পাঁচ মাসের মধ্যেই কর্নেল রশিদ-কর্নেল ফারুক জিয়ার বিরুদ্ধে ক্যুর উদ্যোগ নেয়
৬। যার আমলে ১৯টি মতান্তরে ২০ টি ক্যু হয়েছে  । পিয়ালের মতও আমিও মনে করি "আসলে ক্যুর জুজু তুলে মুক্তিযোদ্ধা সামরিক অফিসারদের হত্যা এবং ফাঁসি দেওয়ার নীলনকশা ছিলো মাত্র।" তবে, শুধু "মুক্তিযোদ্ধা হত্যা" না বলে আমি বলব জিয়া তার নিরংকুশ ক্ষমতা বজায় রাখার স্বার্থে বিরুদ্ধ বা সম্ভাব্য শত্রুদের নির্মমভাবে হত্যা করেছেন । "He was a man who could kill with one hand &eat with the other"-A Zia colleague during the liberation war in Chittagong.  আর জিয়ার এই সব গণহত্যায় তার ডান হাত ছিলেন জেনারেল মন্জুর বীরউত্তম ,মীর শওকত বীরউত্তম আর লেজেহুমো এরশাদ । 
৭। যিনি সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এমন কথা জোরেশোরে বলা হয় যা একটি মিথ বৈ কিছু নয় ।
৮। যিনি সংবিধান থেকে 'ধর্মনিরপেক্ষতা'র উপরে কাঁচি চালিয়ে অন্তর্ভুক্ত করেন 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' মুলনীতি হিসেবে স্থাপন করেন - 'সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা আর বিশ্বাস'কে। সংবিধানের ১২ নং অনুচ্ছেদের উচ্ছেদ করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করেন ।
৯। রাজাকারদের শুধু রাজনীতি করার অধিকারই দেননি তাদের মন্ত্রীসভায়ও স্থান দেন । আন্তর্জাতিক রাজাকার শাহ আজিজকে বানান প্রধানমন্ত্রী । আরেক রাজাকার মওলানা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ (শর্ষিণার পীর সাহেব)কে স্বাধীনতা পদক দিয়েছেন ।
১০। মুজিব হত্যায় তিনি জড়িত ছিলেন কিনা সেই প্রশ্নে না গিয়েও বলা যায় তিনি আগে থেকে জানতেন কিন্তু ঠেকাতে চাননি এবং পাওয়ারে এসেও তাদের বিচারের সম্মুখীন তো করেননি বরং বিচারের পথই রুদ্ধ করেন  । হত্যার রাজনীতি যে ভাল নয় তা' স্বয়ং জিয়া নিজের জীবন দিয়ে প্রমান করেন । ৩০ শে মে ১৯৮১ , রোজ শনিবার , ভোর সাড়ে চারটা , চিটাগাং সার্কিট হাউজ । বর্ষন শ্রান্ত রজনীর শেষ প্রহর , চট্রগ্রামবাসীদের চকিত শংকিত করে জেগে উঠল নৈশ স্তব্ধতা ভঙ্গকারী গোলাগুলির শব্দ । সার্কিট হাউজ চত্বর ভরে গেল ধোয়া আর বারুদের গন্ধে । সার্কিট হাউজে ঘুমিয়েছিলেন তিনি ।গোলাগুলির শব্দে উঠে বসলেন । কি ব্যাপার ? ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে বেরিয়ে এলেন দরজা খুলে , পরনে রাতে শয্যার পোষাক । গভীর আত্মপ্রত্যয় আর অগাধ আস্থা নিয়ে বেরিয়ে এলেন ।কি চাও তোমরা? কাছে দন্ডায়মান লে. মোসলেহউদ্দিন রীতিমত ঘাবরে যান । সে জিয়াকে আশ্বস্ত করে-‘‘স্যার আপনি ঘাবরাবেন না । এখানে ভয়ের কিছু নেই ।’’ মোসলেহউদ্দিনের ঠোট থেকে জিয়ার প্রতি আশ্বাসবানী মিলিয়ে যাবার আগেই লে. কর্নেল মতিউর রহমান তার এসএমজি থেকে অতি কাছ থেকে ব্রাশ ফায়ার করেন জিয়ার শরীরের ডানদিক একেবারে ঝাঝরা করে ফেলে । দরজার কাছেই মুখ থুবরে মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন জিয়া ।

লেখার ইতি টানছি জিয়াকে নিয়ে প্রফেসর আহমদ শরীফ স্যারের মূল্যায়ন দিয়েঃ
"জিয়া ছিলেন যুগপৎ ধূর্ত কপট প্রতারক ষড়যন্ত্রকারী।….এমন অমানুষ সত্যি দুর্লভ " 

রেফারেন্সঃ
৬। Bangladesh: A Legacy of Blood, by Anthony Mascarenhas, Hodder and Stoughton, 1986
৭। প্রাগুক্ত
৯। Anthony Mascarenhas, প্রাগুক্ত


বিচারের আগেই তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলানোর সিদ্ধান্ত ছিল জিয়ার, এই বিচার অসাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় অপরাধ ----

কালের কণ্ঠ

সামরিক ট্রাইব্যুনালে কথিত বিচারের আগেই জিয়াউর রহমান ব্যক্তিগতভাবে লে. কর্নেল এম এ তাহেরকে ফাঁসিতে ঝোলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ কারণে ক্যাঙ্গারু আদালতে সাজানো বিচার করে তড়িঘড়ি ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কর্নেল তাহেরসহ অন্যদের বিচার ছিল একটি অসাংবিধানিক ব্যবস্থা। এটি একটি রাষ্ট্রীয় অপরাধ।
এসব কথা লিখিতভাবে হাইকোর্টকে জানিয়েছেন হংকং থেকে প্রকাশিত ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাবেক প্রতিনিধি লরেন্স লিফশুলজ। জিয়াউর রহমানের এ পরিকল্পনার কথা তাঁকে জানিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সেইসময়কার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ মঞ্জুর। লিফশুলজের এ লিখিত বক্তব্য গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেনের বেঞ্চে উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান।হাইকোর্ট গত ২০ জানুয়ারি এক আদেশে লরেন্স লিফশুলজকে ২৬ জানুয়ারির মধ্যে আদালতে উপস্থিত হয়ে কর্নেল তাহেরের বিচার সম্পর্কে তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। আদালতের এ অনুরোধ রাষ্ট্রপক্ষ ই-মেইলের মাধ্যমে লিফশুলজকে জানানকিন্তু তাঁর ছেলে মারাÍক দুর্ঘটনার শিকার হওয়ায় তিনি এ সময় বাংলাদেশে আসতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তাঁর বক্তব্য হলফনামা আকারে বাংলাদেশের দূতাবাসে দাখিল করেছেন। একই বক্তব্য ই-মেইলে এম কে রহমানের কাছে পাঠিয়েছেন। ই-মেইলে পাঠানো এ বক্তব্যই গতকাল আদালতে উপস্থাপন করা হয়। 
কর্নেল তাহেরকে ফাঁসি দেওয়ার পর তাঁর বিচার নিয়ে লিফশুলজের তিনটি প্রতিবেদন ১৯৭৬ সালের ২৩ ও ২৪ জুলাই ডেইলি স্টার প্রকাশ করে। লিফশুলজ ১৯৭৬ সালে কর্নেল তাহেরের বিচার পর্যবেক্ষণ এবং এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরির জন্য ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। কর্নেল তাহেরের গোপন বিচার সম্পর্কে আগে থেকেই মেজর জেনারেল মঞ্জুরের কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছিলেন। মঞ্জুর তাঁকে এই বিচার বিষয়ে বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধ করেন। কিন্তু তৎকালীন সামরিক কর্মকর্তারা তাঁকে বিচারের সংবাদ সংগ্রহ করতে দেননি। তাঁকে কারাগারের সামনে থেকে আটক করে বাংলাদেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর এ কারণেই আদালত লিফশুলজের বক্তব্য শুনতে চান। ওই তিনটি প্রতিবেদন তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে কর্নেল তাহেরের বিচারের সময় সেনাবাহিনীতে কর্মরত মেজর জেনারেল নূরুল ইসলাম শিশুকে আদালতে হাজির হওয়ার সময়সীমা ১৩ ফেব্রয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছেন আদালত।লিফশুলজ আরো জানিয়েছেন, তাহেরের বিচার ও ফাঁসি ঠেকাতে চেষ্টা করেও সফল হননি জেনারেল মঞ্জুর। সব আইন-কানুন ও বাংলাদেশের সংবিধান লঙ্ঘন করে তাঁকে ওই বিচারের মুখোমুখি করা হয়। এ বিষয় নিয়ে তিনি জিয়াউর রহমানের একটি সাক্ষাৎকার নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জিয়া তাতে রাজি হননি। লিফশুলজ আরো বলেন, ‘আমার অভিমত, ১৯৭৬ সালের জুন ও জুলাই মাসে ঢাকায় একটি হƒদয়বিদারক অপরাধ (ট্র্যাজিক ক্রাইম) ঘটানো হয়েছিল। আমিই ছিলাম এ ঘটনার একমাত্র নিরপেক্ষ সাক্ষী।তিনি বলেন, ১৯৭৬ সালের ২৮ জুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করেছি। তাহেরের বিচারকে কেন্দ্র করে সেখানে একটি যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছিল। দেখে মনে হয়েছিল, যেন সেনাবাহিনী যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারাগারের দেয়াল ঘেঁষে মেশিনগান বসানো হয়।তিনি বলেন, ‘১৯৭৬ সালের জুনের প্রথম দিকে কাঠমান্ডু থেকে ঢাকায় আসি আমি। এর আগে ১৯৭৫ সালের আগস্টে বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের মতো হƒদয়বিদারক ঘটনা সম্পর্কে প্রতিবেদন তৈরি করেছি। একই বছরের ৭ নভেম্বরের ঘটনা সম্পর্কেও রিপোর্ট করেছি।’লিফশুলজ আরো বলেন, ‘আমি ঢাকায় নেমে মেজর জেনারেল মঞ্জুরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। মঞ্জুর একসময় সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ ছিলেন। এর আগে ১৯৭৪ সালে তাঁর সঙ্গে নয়াদিল্লিতে পরিচয়। তখন মঞ্জুর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হয়ে ভারতে দায়িত্বরত ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতা শুনেছি। তিনি, কর্নেল তাহের ও মেজর জিয়াউদ্দিন একসঙ্গে পাকিস্তান থেকে কাশ্মীর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। কর্নেল তাহের মুক্তিযুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। রিভিউর বাংলাদেশ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কারণে বাংলাদেশের অনেক সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তির সঙ্গে আমার আগে থেকেই জানাশোনা ছিল।
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় আসার কথা শুনে মঞ্জুর খুব খুশি হয়েছিলেন। তিনি আমাকে একদিন সেনাসদরে ডাকলেন। এক রাতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সে সময় তিনি (মঞ্জুর) আমাকে কর্নেল তাহেরের গোপন বিচার সম্পর্কে তথ্য দেন এবং এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট করার অনুরোধ জানান। ওই সময় মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি সেনাবাহিনীতে প্রভাব বিস্তার করছিল।
লিফশুলজ বলেনআমি জেনারেল জিয়ার একটি সাক্ষাৎকার নেওয়ার চেষ্টা করি। এ জন্য তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আমাকে প্রশ্নের তালিকা তৈরি করতে বলেন। আমি তালিকা করি। সেখানে ফারাক্কা সমস্যাসহ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে প্রশ্ন ছিল। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সম্পর্কেও প্রশ্ন লিখি। সেখানে লিখি কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে আপনার জীবন রক্ষা করা হয়েছিল। কেন তাহেরকে গ্রেপ্তার করা হলো, কেন তাঁকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না, কেন তাঁকে আটক রাখা হয়েছে? এসব প্রশ্ন লিখি। কিন্তু আমাকে সাক্ষাৎকার দেওয়া হলো না। এতে আমি আশ্চর্য হইনি। কারণ ওই জেনারেলের অন্য পরিকল্পনা ছিল।
লিফশুলজ আরো বলেন, ‘আমি ইংল্যান্ডের ক্যাম্ব্রিজে বসবাস করছিলামতখন মঞ্জুর আমাকে বলেছিলেন, তিনি তাহেরের বিচার বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেনাবাহিনীর তৃতীয় ব্যক্তি হওয়ার পরও তখন তিনি ছিলেন ক্ষমতাহীন। 
সামরিক আদালতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল (অব.) তাহের এবং তাঁর সঙ্গীদের বিচারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দাখিল করা পৃথক চারটি রিট মামলা বিচারাধীন। এরই মধ্যে এ মামলায় হাসানুল হক ইনু এমপি, মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ এম এম শওকত আলী, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, জাসদ নেতা বদরুল আলমের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন আদালত। 
কর্নেল তাহেরের স্ত্রী লুৎফা তাহের, অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন ও একই বিচারে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তাঁর আরেক ভাই প্রয়াত ফ্লাইট সার্জেন্ট আবু ইউসুফ খানের স্ত্রী ফাতেমা ইউসুফ, জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনু ও রবিউল আলম ও মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিনসহ ৯ জন চারটি রিট আবেদন করেন।
তাহেরের বিচারের বৈধতা নিয়ে প্রথম রিট আবেদনের পর গোপন বিচারের নথি তলব করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে তাহেরের বিচারের জন্য সামরিক আইনের মাধ্যমে জারি করা আদেশ এবং এর আওতায় গোপন বিচার ও ফাঁসি কার্যকর করাকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে নাÑতা জানাতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার বিচারের কোনো নথি আদালতে দাখিল করতে পারেনি।
১৯৭৬ সালে সামরিক আদালতে কর্নেল তাহের, হাসানুল হক ইনু এমপির সঙ্গে মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিনসহ অপরাপর ব্যক্তিদের বিচার করা হয়। কর্নেল তাহেরসহ ১৭ জনকে সামরিক আদালতের গোপন বিচারে ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই সাজা দেওয়া হয়। এরপর ২১ জুলাই ভোররাতে তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
রিটে ১৯৭৬ সালের ১৬ নম্বর সামরিক ফরমানের আওতায় আদালত গঠন ও বিচারকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা, দণ্ড বাতিল ও তাঁদের হারিয়ে যাওয়া সামাজিক মর্যাদা ফিরে পাওয়ার আবেদন জানানো হয়।

No comments:

Post a Comment